Monday, August 18, 2025

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন, সমর্থন জামায়াতের

আরও পড়ুন

সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ‘সুরক্ষা’ নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন (পিআর) পদ্ধতির দাবি জানিয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

এতে সমর্থন জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, যারা বলছে- সংস্কার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। একই সঙ্গে অভিযোগ করেছে, রাজনৈতিক সংস্কারে ঐকমত্যে না এসে বিএনপি-ই নির্বাচন বিলম্বিত করছে।

শনিবার (১২ জুলাই) ঢাকার একটি হোটেলে ইসলামী আন্দোলনের আয়োজনে ‘গণ–অভ্যুত্থানের পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর) বলেন, পিআর পদ্ধতি হলো মাদার অব অল রিফর্ম। এটা বাস্তবায়ন ছাড়া প্রকৃত গণতন্ত্র সম্ভব নয়।

পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক

পিআর পদ্ধতির সমালোচনায় বিএনপি বলছে, এতে সরকার গঠন স্থিতিশীল হবে না। এর জবাবে চরমোনাই পীর বলেন, ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন আর রাজনৈতিক অস্থিরতা এক বিষয় নয়। ইতালিতে বারবার সরকার বদল হলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। আর বাংলাদেশে ১৯৮১ সাল থেকে প্রায় একই দল দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও স্থিতিশীলতা আসেনি।

আরও পড়ুনঃ  সাতক্ষীরা পলিটেকনিক থানা শাখার ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি ও সেক্রেটারি নাম প্রকাশ

এদিকে এনসিপি, নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি ও আরও কয়েকটি দল সংসদে প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনও পিআর পদ্ধতিতে করার পক্ষে মত দিয়েছে।

পিআর পদ্ধতিতে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে না- এ সমালোচনার জবাবে ইসলামী আন্দোলনে আমির বলেছেন, জাতিগত, ভাষাগত বিবেচনায় বাংলাদেশ একক ধারার দেশ। স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি মুখ্য, যেসব ভাষা, নৃতত্ত্ব, সংস্কৃতি ও ধর্মের বিভাজন রয়েছে। তারপরও পিআর পদ্ধতিতেও ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব, তুরস্কের মতো বিভাগভিত্তিক নির্বাচনের মাধ্যমে।

পিআর পদ্ধতিতে সংসদীয় আসন থেকে এমপি নির্বাচিত না হওয়া, জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হবে- এ সমালোচনার জবাবে রেজাউল করীম বলেছেন, এলাকার উন্নয়ন সংসদ সদস্যদের কাজ নয়। এমপিরা বৈষম্যহীন নীতি প্রণয়ন করলে, দেশে সর্বত্র উন্নয়ন হবে। আর উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। পিআরে এমপি প্রার্থী না থাকায়, কেউ ভোট ডাকাতির জন্য মরিয়া হবে না। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

আরও পড়ুনঃ  ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি গ্রেফতার

পিআর পদ্ধতিকে সংস্কারের সুরক্ষার একমাত্র উপায় আখ্যা দিয়ে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে চরমোনাই পীর বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি মর্যাদা নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। ফলে এখন চাপে পড়ে সংস্কারে রাজি হলেও পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সংস্কার রাখবে কিনা অনিশ্চয়তা আছে। ৪০ থেকে ৪৯ শতাংশ ভোটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়ে একক কর্তৃত্বে সংবিধান কাটাছেঁড়ারও নজির রয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় আগামী নির্বাচনেও একই পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সংস্কার ভেস্তে যেতে পারে।

সংস্কার না হলে জামায়াত নির্বাচনে যাবে না

বিএনপি নয়, অন্যান্য দলই সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে বলে দাবি করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, একটি দলের কারণে সংস্কারে ঐকমত্য আটকে যাচ্ছে। ঐকমত্য না হলে কমিশনের উচিত গণভোটে যাওয়া। জনগণ যদি আমাদের অবস্থানকে গ্রহণ করে, তবে পিআর হবে। গ্রহণ না করলে আরেকটি দল যা বলছে, তা হবে।

পিআরে একমত দলগুলোকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। সংস্কার ছাড়া জামায়াত নির্বাচনে যাবে না জানিয়ে বিএনপির উদ্দেশ্যে গোলাম পরওয়ার বলেছেন. ‘আপনারা বলছেন আমরা নির্বাচন চাচ্ছি না, পিআরের কথা বলে নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছি। আমরা বলতে পারি, আপনারা তো সংস্কার চাচ্ছেন না। আর সংস্কার না হলে তো আমরা নির্বাচনে যাব না। ঐকমত্যে না এসে বিএনপিই নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  গোপনে বন্ধুকে বিয়ে করলেন জনপ্রিয় বাঙালি অভিনেত্রী

উচ্চকক্ষে পিআর হলে সংবিধানে নয়-ছয় হবে ন

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমানে যে নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু আছে, তাতে দলবাজি হয়। উচ্চকক্ষে পিআর হলে সংবিধানে নয়-ছয় করে হাত দেওয়া বন্ধ হবে।

গোলটেবিলে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, গণ অধিকার পরিষদের হাবিবুর রহমান, ইসলামি ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন প্রমুখ।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ